ভাত এবং স্বাস্থ্য

চাল এবং ডায়াবেটিস: কী খেলে ভালো?
বিশ্বের অনেক দেশে প্রচুর চাল খাওয়া হয়, এবং এর কারণে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের হার বাড়ছে। তাই চালের স্বাস্থ্য প্রভাব নিয়ে গবেষণা হয়েছে। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) হল একটি মাপকাঠি, যা জানায় খাবার খাওয়ার পর রক্তে শর্করা কত দ্রুত বাড়ে। চাল সাধারণত উচ্চ GI খাবার, তবে এটি চালের ধরন এবং প্রক্রিয়াকরণের ওপর নির্ভর করে (যত বেশি প্রক্রিয়াজাত, তত বেশি GI)। চালের GI ৪৮ থেকে ৯৩ পর্যন্ত হতে পারে।

  • কম GI (৫৫ বা কম) খাবারগুলো শরীরে ধীরে শর্করা বাড়ায়।
  • মাঝারি GI (৫৬-৬৯) খাবারগুলো কিছুটা দ্রুত শর্করা বাড়ায়।
  • উচ্চ GI (৭০-১০০) খাবারগুলো রক্তে দ্রুত শর্করা বাড়ায়।
  • ব্রাউন রাইসের GI কম, ৫৫, কিন্তু সাদা চালের GI বেশি, ৬৪।


গবেষণা বলছে, যারা বেশি উচ্চ GI খাবার খান, তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সাদা চাল বেশি খান, তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৫৫% বেশি। তবে যারা প্রতিদিন ব্রাউন রাইস খান, তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৩২% কম।


আরেকটি বড় গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতি সপ্তাহে ৫ বা তার বেশি সাদা চাল খান, তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১৭% বেশি। কিন্তু যারা সপ্তাহে দু’বেলা বা তার বেশি ব্রাউন রাইস খান, তাদের ঝুঁকি ১১% কম।


এখানে একটাই পরামর্শ: সাদা চালের পরিবর্তে ব্রাউন রাইস খান, এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমান।

হৃদরোগ এবং চাল
একটি বড় গবেষণায় ৭১,৭৫০ জন নারী এবং ৪২,৮২৩ জন পুরুষের ওপর করা হয়েছে, যেখানে দেখা গেছে যে ব্রাউন রাইস খাওয়া স্ট্রোক বা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় না। তবে, এই গোষ্ঠীটি ব্রাউন রাইসের তুলনায় অন্যান্য স্বাস্থ্যকর শস্য বেশি খেত, যেমন পুরো শস্য সিরিয়াল ও ব্রান, যেগুলি স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
আরও এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সাদা বা ব্রাউন রাইস খাওয়া হৃদরোগ, স্ট্রোক বা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় না।


চালে আর্সেনিক: বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ টিপস
আর্সেনিক একটি বিষাক্ত ধাতু যা প্রাকৃতিকভাবে মাটি, পানি, এবং পাথরে থাকে। বাংলাদেশে অনেক অঞ্চলে চাল জলপ্লাবিত জমিতে চাষ করা হয়, এবং সেখানকার পানি ও মাটি আর্সেনিক দ্বারা দূষিত হতে পারে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চল এবং মংলা, চট্টগ্রাম অঞ্চলে আর্সেনিকের পরিমাণ বেশি।
আর্সেনিকের প্রভাব: দীর্ঘ সময় ধরে আর্সেনিক খাওয়ার ফলে রক্তচাপ বাড়তে পারে, ডায়াবেটিস এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে। শিশুরা আর্সেনিকের প্রভাবে স্নায়ুজনিত সমস্যা বা ক্যান্সারের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।


কী করবেন?
ব্রাউন রাইস সাদা চালের তুলনায় স্বাস্থ্যকর, তবে এতে আর্সেনিক বেশি থাকে। তাই ব্রাউন রাইস খাওয়ার আগে ভালভাবে ধুয়ে, ৬-১০ কাপ পানি দিয়ে রান্না করুন। এতে আর্সেনিক ৫০% কমে যাবে।


কম দূষিত এলাকা থেকে চাল কেনার চেষ্টা করুন, যেমন সিলেট, ময়মনসিংহ রাজশাহী বা রংপুর থেকে আসা চাল।
সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন!


এভাবে আপনি আর্সেনিকের প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন এবং সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবেন।